You are currently viewing Zero-Based Budgeting – একেবারে শুরু থেকে বাজেট পরিকল্পনা
Zero-Based Budgeting – একেবারে শুরু থেকে বাজেট পরিকল্পনা

Zero-Based Budgeting – একেবারে শুরু থেকে বাজেট পরিকল্পনা

“বাজেট” শব্দটা শুনলেই অনেকের কপালে ভাঁজ পড়ে। মনে হয়, বুঝি আনন্দে ভাটা পড়বে, খরচে লাগবে কাঁচি, জীবন হবে সীমাবদ্ধ। অথচ বাস্তবতা হলো – বাজেট আসলে স্বাধীনতার রোডম্যাপ। আপনি ঠিক করেন, আপনার উপার্জিত প্রতিটি টাকা কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহার হবে।

এই সিদ্ধান্তকে সুস্পষ্ট ও নিয়ন্ত্রিতভাবে কার্যকর করতে হলে প্রয়োজন একটি শক্তিশালী পদ্ধতির — আর সেখানেই আসে Zero-Based Budgeting। এটি এমন এক বাজেটিং কৌশল, যা শুরু হয় একেবারে শূন্য থেকে, কিন্তু নিয়ে যেতে পারে আপনাকে আর্থিক আত্মনির্ভরতার চূড়ায়।

চলুন জেনে নিই, Zero-Based Budgeting কী, এটি কীভাবে কাজ করে, এবং কীভাবে এটি আপনার জীবনে আনতে পারে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন।

Zero-Based Budgeting কী?

Zero-Based Budgeting (ZBB) একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা পদ্ধতি, যেখানে প্রতি মাসের শুরুতে আপনার প্রতিটি টাকা “কোথায় যাবে” তা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ, মাস শেষে আপনার আয় থেকে খরচ ও সঞ্চয়ের পর ব্যালেন্স শূন্য (০) হওয়া উচিত।

এটি শুধু খরচ কন্ট্রোল করার পদ্ধতি নয় — বরং একটি উদ্দেশ্যভিত্তিক টাকার ব্যবহার নিশ্চিত করার কৌশল।

এটি কিভাবে কাজ করে (আয় – খরচ = ০)

Zero-Based Budgeting-এর মূল ধারণা খুবই সরল:

মোট আয় – মোট খরচ = ০

এর মানে এই নয় যে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খালি থাকবে। বরং, আপনার প্রতিটি টাকা কোনো না কোনো ‘কাজে’ নিযুক্ত থাকবে — সেটা খরচ, সঞ্চয়, ইনভেস্টমেন্ট বা ঋণ পরিশোধ হোক না কেন।

উদাহরণ:
ধরুন, আপনার মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা। তাহলে আপনার বাজেটে এই রকম হতে পারে:

  • বাসাভাড়া: ১৫,০০০

  • বাজার: ৮,০০০

  • ইউটিলিটি বিল: ৩,০০০

  • ট্রান্সপোর্ট: ২,০০০

  • সঞ্চয়: ১০,০০০

  • বিনোদন: ২,০০০

  • ইনভেস্টমেন্ট: ৫,০০০

  • জরুরি ফান্ড: ৫,০০০

মোট খরচ = ৫০,০০০ → অবশিষ্ট = ০

খরচ প্ল্যানিং আগে, তারপর খরচ

অধিকাংশ মানুষই মাসের শুরুতে আয় পেলেই খরচ করতে শুরু করেন। পরে যখন মাসের শেষে পকেট ফাঁকা হয়ে যায়, তখন ভাবেন—“আরো সঞ্চয় করা উচিত ছিল।” কিন্তু অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এই পদ্ধতি একেবারেই অনুপযুক্ত। Zero-Based Budgeting ঠিক এর উল্টো কথা বলে: খরচ নয়, আগে পরিকল্পনা করুন।

প্রতিটি মাসের শুরুতেই নির্ধারণ করুন—আপনার মোট আয় কোথায় যাবে, কী পরিমাণ যাবে এবং কোন খরচগুলো আসলেই জরুরি। প্রথমে প্রয়োজনীয়তা, তারপর অগ্রাধিকার, এরপর অবসর ও বিনোদন।
আগের মাসের খরচগুলো বিশ্লেষণ করুন—কোন খাতে বেশি খরচ হয়েছে? কোনটা এড়ানো যেত?

এই অভ্যাস আপনাকে স্রেফ খরচ নিয়ন্ত্রণেই সাহায্য করে না, বরং আর্থিক আত্মনিয়ন্ত্রণ ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, আপনি যদি পরিকল্পনা না করেন, আপনার টাকা নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে নেবে—সেটি হয়তো আপনার লক্ষ্যের দিকে নয়।

ক্যাশ ফ্লো ম্যাপ তৈরি: আপনার টাকার চলাচলের মানচিত্র

Zero-Based Budgeting সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার মাসিক ক্যাশ ফ্লো বা অর্থপ্রবাহের একটি পরিষ্কার ও বাস্তবসম্মত ম্যাপ তৈরি করা। এতে আপনি দেখতে পাবেন কোথা থেকে টাকা আসছে এবং কোন খাতে যাচ্ছে।

১. মোট আয় নির্ধারণ করুন

প্রথমেই আপনার মাসিক সব ধরনের আয়ের যোগফল বের করুন। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে—

  • চাকরির বেতন

  • ফ্রিল্যান্সিং আয়

  • ব্যবসার লাভ

  • অতিরিক্ত ইনকাম (যেমন টিউশন, অনলাইন আয় ইত্যাদি)

২. সব ব্যয়ের তালিকা করুন

এরপর আপনার সমস্ত মাসিক ব্যয় তালিকাভুক্ত করুন। খরচের ধরন অনুযায়ী ভাগ করুন—

  • আবশ্যিক খরচ: ভাড়া, বাজার, ইউটিলিটি বিল

  • ঐচ্ছিক খরচ: খাওয়া-দাওয়া বাইরের, বিনোদন

  • ভবিষ্যতের জন্য: সঞ্চয়, ইনভেস্টমেন্ট, জরুরি ফান্ড

৩. প্রতিটি খাতে নির্দিষ্ট টাকা বরাদ্দ দিন

এখন প্রতিটি ব্যয় ক্যাটাগরিতে কত টাকা যাবে তা নির্ধারণ করুন। এটি আপনার প্রয়োজন ও লক্ষ্য অনুযায়ী হবে। নিশ্চিত করুন যেন প্রতিটি টাকাই কোনো না কোনো খাতে “জায়গা পায়”।

৪. হিসাব মেলান: আয় – খরচ = ০

সব খাতে টাকা বরাদ্দ দেওয়ার পর আপনার মোট আয় ও মোট খরচ সমান কিনা মিলিয়ে নিন। যদি উদ্বৃত্ত থাকে, সেটা কোথায় যাবে নির্ধারণ করুন। ঘাটতি থাকলে কোন খরচ কমানো যাবে তা দেখুন।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি আপনাকে আর্থিক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে এবং নিশ্চিত করবে যে আপনার প্রতিটি টাকা কোনো অর্থবহ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কারা এটি ব্যবহার করতে পারেন?

Zero-Based Budgeting এমন একটি অর্থনৈতিক কৌশল যা কার্যত সকলের জন্য উপযোগী — বিশেষ করে যারা নিজেদের টাকার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে চান। নিচে কিছু নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করা হলো, যারা এই পদ্ধতি থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারেন:

✅ নতুন চাকরিজীবী

আপনি যদি সদ্য চাকরি শুরু করে থাকেন, তাহলে Zero-Based Budgeting আপনাকে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে সাহায্য করবে। শুরুতেই ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা ভবিষ্যতের আর্থিক সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করে।

✅ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি

যারা ব্যক্তিগত ঋণ, ক্রেডিট কার্ড লোন বা শিক্ষাঋণের বোঝা বহন করছেন, তাদের জন্য এই পদ্ধতি আদর্শ। এতে প্রতিটি টাকা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বরাদ্দ হয়, ফলে দ্রুত ঋণ শোধ করা সম্ভব হয়।

✅ পারিবারিক বাজেট পরিকল্পনায় যুক্ত দম্পতি

যেসব দম্পতি পরিবারিক খরচ একসাথে পরিচালনা করেন, তাদের জন্য এটি স্বচ্ছতা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তি গড়ে তোলে। দুজন মিলে মাসের শুরুতেই পরিকল্পনা করলে অপ্রত্যাশিত খরচ কমে যায়।

✅ স্বল্প আয়ের পরিবার

যাদের আয় সীমিত, তাদের জন্য প্রতিটি টাকার গুরুত্ব অনেক। Zero-Based Budgeting-এর মাধ্যমে তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় খরচ করতে পারে, ফলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমে যায় এবং সঞ্চয় বাড়ে।

✅ স্টুডেন্ট বা ফ্রিল্যান্সার

যাদের আয় অনিয়মিত বা প্রকল্পভিত্তিক, তাদের জন্যও এই পদ্ধতি কার্যকর। প্রতি মাসে আয় অনুযায়ী বাজেট ঠিক করে নেওয়া যায়, ফলে খরচের নিয়ন্ত্রণে কোনো ঘাটতি পড়ে না।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো: টাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়া। আপনি ঠিক করেন, আপনার আয় কোথায় যাবে — টাকা নয়!

চিন্তা করে দেখুন, আপনি কোন গোষ্ঠীতে পড়েন? তাহলে আজই শুরু করুন Zero-Based Budgeting।

প্র্যাকটিকাল টুল ও টেমপ্লেট: আপনার বাজেটিংয়ের সঙ্গী

Zero-Based Budgeting বাস্তবে প্রয়োগ করতে গেলে কাগজ-কলমে হিসেব রাখা যেমন সম্ভব, তেমনি প্রযুক্তির কিছু টুল ও টেমপ্লেট এই কাজকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং ট্র্যাকযোগ্য করে তোলে। নিচে কিছু জনপ্রিয় ও কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:

🧾 Google Sheets বা Excel

যারা ম্যানুয়ালি বাজেট তৈরি করতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য Google Sheets বা Microsoft Excel একটি অসাধারণ টুল।

  • আপনি সহজে একটি কাস্টম টেমপ্লেট তৈরি করতে পারেন

  • মাসিক আয়, খরচ, সঞ্চয় — সবকিছু ট্র্যাক করা যায়

  • প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা সহজ

বোনাস: আপনি চাইলে বাংলা ভাষায় একটি প্রি-ডিজাইনড Zero-Based Budget Template পেতে পারেন। (নিচে রিসোর্সে লিংক দেওয়া যাবে)

📱 You Need A Budget (YNAB)

YNAB একটি জনপ্রিয় Zero-Based Budget সফটওয়্যার। এটি মূলত চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে — প্রতিটি টাকার দায়িত্ব দিন, বাস্তবায়ন ট্র্যাক করুন, নমনীয় থাকুন, এবং পূর্ব প্রস্তুতি নিন।

  • অ্যাপ এবং ওয়েব ভার্সন দুটোই আছে

  • ব্যয়ের অ্যালার্ট ও রিমাইন্ডার দেয়

  • ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সাথে সংযোগ করে ট্র্যাক করে

💰 প্রিমিয়াম অ্যাপ, তবে ট্রায়াল ভার্সন রয়েছে।

📲 EveryDollar

Dave Ramsey-এর তৈরি Zero-Based Budget অ্যাপ, যা খুবই ইউজার-ফ্রেন্ডলি।

  • প্রতিটি ডলার কোথায় যাবে তা ঠিক করা যায়

  • খুব দ্রুত বাজেট তৈরি করা যায়

  • ফ্রি ও পেইড দুইটি ভার্সনেই পাওয়া যায়

📄 Bengali Budget Template (PDF)

যারা কাগজে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বা বাংলা ভাষায় সহজভাবে বুঝতে চান, তাদের জন্য বাংলা ভাষায় তৈরি প্রিন্টেবল PDF বাজেট টেমপ্লেট একটি কার্যকর সমাধান।

  • হাতে লিখে পরিকল্পনা করার সুযোগ

  • পরিবারের সদস্যদের সাথে ভাগ করে ব্যবহার করা যায়

  • বাংলা ভাষায় নির্দেশনা থাকায় বয়স্করাও সহজে বুঝতে পারেন

শেষ কথা: টাকায় থাকুক উদ্দেশ্য, জীবনে থাকুক নিয়ন্ত্রণ

Zero-Based Budgeting কেবল একটি বাজেটিং টুল নয়—এটি আপনার টাকার ওপর কর্তৃত্ব ফেরানোর একটি কৌশল। এতে প্রতিটি টাকা নিজ নিজ দায়িত্ব পায়, এবং আপনি হয়ে ওঠেন সেই টাকার সত্যিকারের পরিচালক।

এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় শক্তি হলো সচেতনতা। আপনি জানেন আপনার আয় কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে, এবং তাতে আপনার ভবিষ্যৎ কীভাবে গঠিত হচ্ছে। এটি কেবল আপনার সঞ্চয় বাড়ায় না—বরং ব্যয়ের পেছনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে তোলে।

আপনি যদি চান—

  • মাসের শেষে টাকার টানাপোড়েন না থাকে

  • ঋণ থেকে মুক্তি পান

  • ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন
    তাহলে আজই কলম তুলে নিন বা একটি বাজেট অ্যাপ খুলুন। শুরুটা হোক Zero-Based Budgeting দিয়ে।

মনে রাখবেন:
📌 আয় = খরচ + সঞ্চয়, আর এই সমীকরণ তখনই কাজ করে, যখন আপনি প্রতিটি খরচের আগে পরিকল্পনা করেন।

আপনার প্রতিটি টাকা যেন হয় অর্থবহ, আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত যেন হয় ভবিষ্যতবান্ধব।

আজই শুরু করুন। নিজের টাকায় নিজের জীবন গড়ুন।

Leave a Reply